নির্বাচিত কয়েকটি দুআ যা নিয়মিত পড়া উচিত

Birds over setting sun

আল্লাহকে ডাকাই হলো আমাদের একমাত্র অবলম্বন। অনেক দুআ আছে; কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়বেন। এজন্য দেখা যায় যে কোনোটাই তেমন পড়া হয় না। তাই বেছে বেছে অপার ফজিলতের কিছু দুআ উল্লেখ করছি। অর্থগুলো দেখলে বুঝবেন কেন আমল করা উচিত।

১. মহান আল্লাহ যে আরও একটা সকাল বা বিকাল আমাদের দিলেন এজন্য শুকরিয়া আদায় করতে সকালে (বা বিকালে) বলবেন:

اللّٰهُمَّ مَا أَصْبَحَ (أَمْسَى) بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে সকালে (বিকালে) উপনীত হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই। আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।

২. আমাদের নিজেদের আর কাজগুলোকে আল্লাহর জিম্মায় ন্যস্ত করার জন্য:

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ

হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।

৩. শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপত্তা লাভের জন্য তিনবার পড়বেন,

اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِي، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِي، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِي، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالفَقْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।

৪. যাবতীয় সবকিছু থেকে ক্ষতি এড়াতে তিনবার বলবেন:

بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الْأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

৫. ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দুআ, যা দিনে ও রাতে একবার করে পড়লে জান্নাত পাবেন:

اللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার রব্ব। আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্যমতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।

৬. দুঃখ ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠার জন্য:

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।

৭. এই দুআটি পড়লে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। সাতবার বলবেন:

حَسْبِيَ اللّٰهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।

৮. কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে তিনবার বলবেন:

رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا

আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।

৯. এই চারটি কালেমা সারা সকাল ইবাদতের চেয়েও ওজনে ভারী। তিনবার বলবেন:

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি — তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তোষের সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ (অগণিত অসংখ্য)।

১০. কিয়ামতের দিন রসুলুল্লাহ (স:)-এর সুপারিশ লাভ করতে দশবার বলবেন:

اللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ

হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।

১১. উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমলের জন্য সকালবেলা তিনবার  বলবেন:

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।

১২. তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কেউ হবে না যে এই দুআ বেশি পড়বে। একশত বার বলবেন:

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ

আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।

১৩. ক্ষমা চাইতে প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার পড়বেন:

أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

আমি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি।

আমাদের দুআগুলোকে আল্লাহ কবুল করুন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান