পাত্র-পাত্রী ও তাদের পরিবারের খোঁজখবর কেন করবেন, কীভাবে করবেন

লিখেছেন: কাজী দিশা

ইনবক্সে তিনটা মেসেজ। তিনজনই মেয়ে। তারা কেউ কাউকে চেনেন না, কিন্তু আমার কাছে তাদের জিজ্ঞাসা একই, “আপু, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিয়ের প্রপোজাল পেয়েছি। আমাদের প্রাথমিকভাবে বায়োডাটার তথ্য ভালো লেগেছে। কিন্তু বাড়ি থেকে বলে অন্য জেলা, এত দূরে কিভাবে খোঁজখবর করব …” 🤔

যারা বিয়ের বিষয়ে পরামর্শ করতে আসেন, বিশেষ করে পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে খোঁজখবর কিভাবে করব জানতে চান তাদেরকে আমি আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ছোট বোনের জন্য পাত্রের খোঁজখবর নেওয়ার ঘটনা শেয়ার করি।

বান্ধবীর বোনের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। অনেক পরিবার প্রাথমিকভাবে মেয়ে দেখানোর আগে খোঁজখবর করেন, আবার অনেক পরিবার ছেলে-মেয়ে প্রাথমিক দেখাদেখির পরে ফাইনাল ডিসিশন নেওয়ার জন্য ভালোভাবে খোঁজখবর করেন।

তো বান্ধবীর বাবা লোকমুখে যতটুকু যা জানার জানলেন। সন্তোষজনক। তবে একটা জিনিস কিনলে নিজে হাতে ওলট-পালট করে দেখে কিনি, আর এ তো নিজের মেয়ের বিয়ে বলে কথা। অতঃপর, তিনি হালকাপাতলা ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসাফির বেশে নিজেই চলে গেলেন পাত্রের এলাকায়। এবারের কথাগুলো ভালো করে মন দিয়ে শুনুন —

👉মসজিদ;

👉এলাকার চায়ের দোকান;

👉একদম নিকটস্থ বাজার;

👉শহর হলে বিল্ডিং এর আশেপাশের দোকান;

👉গ্রাম হলে জমিতে কর্মরত লোকজন যারা পাত্র গৃহস্থ, বংশীয়, শিক্ষিত বহু কিছু তথ্য দিতে পারবে;

👉নাপিতের দোকান (সবার পরিচিত);

👉মুদি দোকান, সবজি বিক্রেতা, ফলের দোকানদার, এরা এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষদের খবর জানেন;

সহজ কথা — আপনি মানুষ কেমন, লেনদেনে কেমন, কেমন নামীদামী বংশ তা ওই মাছওয়ালা, দুধওয়ালা, মুচি, এরাই বলতে পারবে।

অতঃপর আংকেল মানে বান্ধবীর বাবা শুনেছেন ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। মসজিদে খোঁজখবর করে জানলেন ছেলেটা ছুটিতে বাড়িতে যে কয়দিন থাকে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ে, তার মানে সে সাপ্তাহিক জুম্মা পড়ুয়া টাইপ নয়।

মাছওয়ালা থেকে খবর মিলল, তাদের বাড়ি সবসময়ই মাছ দেই। টানাটানি আয়ের বা কিপটে স্বভাবের হলে তো মাছওয়ালার সাথে এত সখ্যতা হওয়ার কথা না।

ধরে নেন, দুজন খারাপও বলল, কিন্তু অধিকাংশজন কী বলেছে সেই মতামতকে গুরুত্ব দিন।

👁️‍🗨️এবার আসি ডিভোর্সড পাত্র পাত্রীর খোঁজখবর কিভাবে নিবেন?

👉ডিভোর্সড পাত্রীর ক্ষেত্রে তার যে ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল সেই ছেলে কোথায় কেমন আছে কী করছে খোঁজখবর করে, পাশাপাশি এই পাত্রীর সম্পর্কে খোঁজখবর করে তবেই একটা সিদ্ধান্তে যাবেন। পাত্র তার নিজের খামতি সহসা বলবে না হয়তো, পাত্রীও বলবে না। আবার অনেকেই সত্য বলবে। কিন্তু সত্য কথাকেও নিজ দায়িত্বে যাচাই করে নিতে হয়।

👉ডিভোর্সড পাত্রের ক্ষেত্রেও তাই। বিনয়ের সাথে পাত্রের কাছ থেকে আগের ওয়াইফের বিস্তারিত তথ্য জেনে নিবেন। যার মনে লুকোচুরি ধরা পড়ার ভয় নেই তারা নিজ থেকেই বলবে, “অমুক জায়গার অমুক মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল এজন্য টিকেনি”, চাইলেই আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। অতঃপর সেখানেও সঠিক খোঁজখবর করার সুযোগ আছে।

হোক ভিন্ন জেলা, হোক অনেক দূরে। সময় নিয়ে খোঁজখবর করে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন।

💞আমি দক্ষিণবঙ্গ আর শ্বশুরবাড়ী উত্তরবঙ্গ। প্রথম অনুসন্ধান হলো পাত্রের অফিসে, তাও তার পূর্ব কর্মস্থল, ফিডব্যাক ভালো। তাহলে এবার বাড়ির দিকে যাওয়া যায়। পরবর্তী ধাপে শ্বশুরবাড়ীর নিকট বাজারের মুচি এবং আরো অনেকজন থেকে তথ্য ভেরিফাই করা হয়েছিল, এমনকি পাত্র যে নারীর সাথে ডিভোর্সড সে ও তার পরিবার সম্পর্কেও খোঁজখবর করা হয়েছিল। কোনো পক্ষই নিজ নিজ ফেবারে কথা বলার জন্য লোক ভাড়া করে রাখেননি। সুতরাং একুরেট তথ্যই মিলল। আমার ভাশুরও ফোনে ফোনে লোক মারফত আমার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত খোঁজ নিয়েছিলেন। ফোনে ফোনে নিলেও ওনার লিংকগুলো শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য ছিল। অতঃপর পাত্র, ঘটক থেকে প্রাপ্ত তথ্য, খোঁজখবর করে পাওয়া তথ্য এবং বিয়ে পরবর্তী রিয়েলিটিতে কোনো গরমিল নেই।

👉এগুলো মূলত ইচ্ছাশক্তি আর বিচক্ষণতার বিষয়। যাকে পেলাম ধরে দিয়ে দিলাম, এমন মানসিকতা থেকে নয়, মানুষের মুখের কথা বিশ্বাস করেও অনেকে কন্যা পুত্রের বিবাহ দেন, যেটা ঠিক নয়। সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে খোঁজখবর করে তবে আত্মীয়তা করতে হয়।

💌💖💌ডিভোর্স এর সংখ্যা বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি সুদের মতো। সংসার আবাদ রাখার জোয়ালটা সদ্য বিবাহিত ছেলে মেয়ে দুজনেরই কাঁধে নিতে হয়। কিন্তু কন্যা পুত্রের ঘরগৃহস্থালির ব্যবস্থা কেমন পরিবারের সাথে হচ্ছে সেই খোঁজখবর নেওয়ার সমগ্র দায়িত্ব তাদের বাবা-মা ও অভিভাবকদের। সংসার পরবর্তী জীবনে নাক গলানো বন্ধ করে দেখেশুনে বিয়ে দেওয়ায় মনযোগী হওয়া জরুরী।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান