দুনিয়াত্যাগী আলিমদের সম্মানজনক সম্মানী নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য

School auditorium

কোনো দরিদ্র আলিমের অভাবের কথা যদি কখনো তুলে ধরা হয়, একটি কথা প্রায় প্রতিবারই শুনে থাকি। তা হলো, আলিমদের দ্বীনি পাঠদানের পাশাপাশি কিছু ব্যবসাবাণিজ্যও করা দরকার। দুনিয়াবী কোনো কাজকর্মও করলো, দ্বীনও শেখালো। এভাবে স্বেচ্ছায় অভাব-অনটনের জিন্দেগী বেছে নেওয়ার তো কোনো অর্থ হয় না!

মূলত যারা এধরনের কথা বলেন, তাদের প্রতি এ সুধারনা তো আছে, তারা আলিমদের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই কথাগুলো বলে থাকেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এ ধরণের চিন্তাধারা সঠিক বলে আমার মনে হয় না।

রাসুলের যুগে সাহাবীদের এক জামাত ছিল, যাদের আসহাবুস সুফফা বলা হতো। মদিনার মসজিদেই তারা থাকতেন অধিকাংশ সময়। রাসুলের থেকে দ্বীন শেখা ছাড়া আর কোনো ব্যস্ততাই তাদের ছিল না। কোথাও থেকে খাবারের ব্যবস্থা হলে, খেতেন। নতুবা না খেয়ে থাকতেন। ব্যবসাবাণিজ্য করার সব যোগ্যতা তাদের থাকা সত্বেও কেন স্বেচ্ছায় এই অভাবের জীবন তারা বেছে নিয়েছিলেন? এরকম একটি জামাতের প্রয়োজন না থাকলে, রাসুল কেন তাদের এরকম করাটাকে অনুমোদন করেছিলেন?

সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী, আবু হুরাইরা নিজেই নিজের অবস্থা বর্ননা করেছেন, খাবারের অভাবে অনেক সময় বেহুশ হয় পড়ে থাকতেন। কুরআনের শিক্ষক, মুসআব বিন উমায়ের-এর বিখ্যাত ঘটনা তো সবার জানা। মক্কার সবচেয়ে বিত্তশালী পরিবারের সন্তান, ইসলাম গ্রহণের পর চটের মতো একটা কিছু জড়িয়ে রাসুলের কাছে আসেন। পরিধানের কাপড়টা পর্যন্ত তার পরিবারের লোকজন রেখে দিয়েছিল। যে কয়দিন বেঁচে ছিলেন, কুরআনের খেদমত করেছেন। কুরআন শিখিয়েছেন। মদিনায় রাসুলের হিজরতের পরিবেশ তৈরি করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রেখেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই মুসআব। তার ইন্তেকাল হয়েছিল এমন অবস্থায়, পুরো শরীর ঢাকার মতো কাফনের কাপড়টুকু পর্যন্ত ছিল না। ব্যবসাবাণিজ্য করার মতো মেধা বা যোগ্যতা কি তার ছিল না?

রাসুলের সাহাবীদের মধ্যে অনেকে ব্যবসাবাণিজ্যও করতেন। তাদের পরবর্তী বিভিন্ন বড় আলিমরাও অবলম্বন করেছেন এরকম দুনিয়াবী আয়রোজগারের নানা উপকরণ। কিন্তু রাসুলের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি যুগেই এরকম অসংখ্য আলিমরা ছিলেন, বরং তাদের সংখ্যাই বেশি, যাদের দ্বীনি তালিম-তাআল্লুম ছাড়া আর কোনো ব্যস্ততা ছিল না। অভাব অনটনেই তাদের পুরো জিন্দেগী কেটেছে। এই দ্বীন, এই ইসলামকে যেভাবে রাসুল নিয়ে এসেছেন ঠিক সেভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার পেছনে যাদের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি, তারা ছিলেন এরকম দুনিয়াত্যাগী আলিমরাই।

তাই, আলিমদেরকে দুনিয়া কামানোর পরামর্শ দেওয়ার অর্থ নিজের পায়েই কুড়াল মারা। বরং প্রতিটি যুগের মতো এই যুগেও আলিমদের এরকম একটি জামাত থাকা প্রয়োজন, যাদের দুনিয়াবী কোনো কর্মব্যস্ততা থাকবে না। তারা কেবল এই কাজের সাথেই লেগে থাকবেন।

আর আমাদের দায়িত্ব হলো, তারা যেন নিশ্চিন্তে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এটা তাদের প্রতি কোনো করুণা করা নয়, বরং আপনার আমার দায়িত্ব।

আপনি কোনো ডাক্তারকে বলেন না, ভাই তুমি ডাক্তারীর পাশাপাশি ব্যবসাও করো। কোনো ইন্জিনিয়ারকে বলেন না, সে যেন তার সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি অন্য কিছুও করে। বরং তার শেখা বিদ্যাটাই যেন সে সমাজের কাজে লাগাতে পারে, তার সব ব্যবস্থা আমরাই করে দেই। তার হ্যান্ডসাম স্যালারি, ভালো থাকা-খাওয়া, সে তার শেখা জ্ঞান দিয়েই ম্যানেজ করবে এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক এবং সম্মানের। তাহলে আলিমদের ব্যাপারে কেন বলি, তুমি দ্বীন শেখার পাশাপাশি দুনিয়াও কিছু কামাও? এ কথা বলার অর্থ তো এটাই, আলিমদেরকে প্রাপ্য হক থেকে মাহরুম করছি আমরা! পালন করছি না আমাদের দায়িত্ব!

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান