পরিস্থিতি যতই হোক প্রতিকূল, আল্লাহর পরিকল্পনায় সবসময় আস্থা রাখুন

বাস্তবতা হলো দুই রকম — একটা আপনি চোখে দেখতে পান, আর অন্যটা চোখে দেখা যায় না। এই মুহুর্তে আমি আপনাদের দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের দুই কাঁধের ফেরেশতাদের কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি না। অথচ তারা এখানেই আছেন।

লাইলাতুল কদরে আকাশের দিকে তাকালে আপনি শুধু আকাশই দেখতে পান। কিন্তু অদৃশ্য বাস্তবতা হলো — সমগ্র আকাশ অবতরণরত ফেরেশতাদের দ্বারা ছেয়ে থাকে।” تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ” – “সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে।” [কুরআন ৯৭:৪] এটা হলো অদৃশ্য জগতের একটি বাস্তবতা। বুঝতে পারছেন? তাহলে বাস্তবতা দুই ধরণের — একটা হলো দৃশ্যমান বাস্তবতা এবং অপরটা হলো অদৃশ্যমান বাস্তবতা।

এখন, এই জ্ঞান আমরা যা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি — আমাদের সকল মতামত, সকল অনুভূতি এবং সকল চিন্তাভাবনা সবসময় দৃশ্যমান বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। কারণ আমাদের নিকট বাস্তবতা এটাই। খবরে যা দেখতে পান, নিজে যার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যখন কেউ আপনাকে কিছু বলে, যখন কিছু অনুভব করেন এগুলো হলো আপনার জীবনের বাস্তবতা।

কিন্তু, এই বাস্তবতার বাইরেও আছে আরেক ধরণের বাস্তবতা। সোর্স কোডের মতো। যেমন, আপনি শুধু অ্যাপের সামনের দিকটাই দেখতে পান, এর পেছনে যে প্রোগ্রামিং কোড রয়েছে তা দেখতে পান না। জগতের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর মাঝেও আল্লাহ একটা পর্দা, একটা অন্তরাল রেখে দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- فَکَشَفۡنَا عَنۡکَ غِطَآءَکَ فَبَصَرُکَ الۡیَوۡمَ حَدِیۡدٌ – “তোমার সামনে যে পর্দা ছিল তা আমি (আজ) সরিয়ে দিয়েছি। (সে কারণে) তোমার দৃষ্টি আজ খুব তীক্ষ্ম।” [কুরআন৫০:২২] তুমি খুব পরিষ্কারভাবে সব দেখতে পাচ্ছ। অন্য কথায়, আল্লাহ এখন পর্দা সরিয়ে ফেলেছেন। তাই, তুমি এখন অদৃশ্য বাস্তবতাও দেখতে পাচ্ছ।

আমাদের জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কখনোই জানতে পারি না আল্লাহ যা যা করেন তা কেন করেন। আমরা জানি না। আমরা জানি না কেন আপনি গাড়ি এক্সিডেন্টের কবলে পড়লেন। আমরা জানি না কেন আপনি চাকরি হারালেন। আমরা জানি না কেন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা জানি না কেন এই সমস্যা ঘটলো, কেন ওই সমস্যা দেখা দিলো।

আপনি তখন ভাবতে শুরু করেন, আল্লাহ কেন এমনটা করলেন। তিনি কেন আমাকে বলেন না যে, তিনি আমার কাছ থেকে কী চান। কেন তিনি অদৃশ্য জগতের পর্দা একটুখানি সরিয়ে দেন না যেন আমি দেখতে পারি আসল রহস্য কী। বড় পরিকল্পনাটি আসলে কী। আমি যদি জানতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার অস্থিরতা দূর হতো।

কুরআনের সূরা কাহফ-এ বর্ণিত খিযির (আ)-এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ মূসা (আ)-কে দেখালেন সবকিছুর ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُطۡلِعَکُمۡ عَلَی الۡغَیۡبِ – আর আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি তোমাদেরকে অদৃশ্য জগতের খবর জানাবেন না। [কুরআন ৩:১৭৯] সকল দৃশ্যমান বিষয়ের পেছনে রয়েছে আরেকটি অদৃশ্য জগত। আর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনাদেরকে সেটা জানাবেন না।

এক্ষেত্রে আমাদেরকে বিনয়ী হতে হবে এবং একটু পেছনে সরে এসে বলতে হবে— আল্লাহ জানেন আর আমরা জানি না।

যখন আমরা আল্লাহর পরিকল্পনার কাছে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে দেই, তার মানে আমরা আল্লাহর সামনে নিজেদের বিনয়ী করে দিয়েছি। আল্লাহর উপর আমাদের ভরসা আছে এবং যে পথে তিনি আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন তাতেও আমাদের আস্থা আছে, যদিও সেই পথটা কষ্টকর মনে হয়, তবু তাঁর উপর আমাদের বিশ্বাস একটুও কমবে না।

আমি বলছি না যে, মানুষ যখন আপনার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে বা অন্যায় আচরণ করে, অথবা কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখেন — আপনার তখন কিছু বলা উচিত না, কারণ এটা আল্লাহর পরিকল্পনা। এখানে এমনটা বলা হচ্ছে না। বরং এমন সব ঘটনাবলী সম্পর্কে বলা হচ্ছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যখন এমন কিছু ঘটে যা আমাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না — মনে রাখবেন, তার জন্যেও একটা পরিকল্পনা আছে। তখনো আল্লাহর একটা পরিকল্পনা কাজ করে।

মনে রাখতে হবে, আল্লাহ যা করছেন তা-ই উত্তম। আল্লাহ যা করছেন নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো প্রজ্ঞা নিহিত আছে। আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।

কখনো কখনো একটি চারাগাছ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠে। আবার কখনো কখনো বড় হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। ঠিক না? তাই, যে বীজের অভিজ্ঞতা আপনি এখন অর্জন করছেন তার ফলাফল কি এখনই দেখা যাবে নাকি আজ থেকে একশ বছর পরে দেখা যাবে, আমরা তা জানি না। সেই পরিকল্পনা আল্লাহর। আমাদের পক্ষে তা জানা কোনোদিন সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদেরকে তা না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অনুবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় Nouman Ali Khan Collection In Bangla ফেসবুক পেইজে। আমার স্পন্দন-এ এর একটি সংক্ষেপিত রূপ প্রকাশ করা হলো।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান