সম্পদ ও কাছের মানুষদের দিয়েও মানুষকে পরীক্ষা করা হয় // রমযান রোজনামচা (১০)

Wooden house

সম্পদ, সন্তান ও সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। এসবের প্রতি আসক্তি দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সহজ এই সত্যটিকে আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ বলেন: زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ “মানুষের জন্য ওই সকল বস্তুর আসক্তিকে মনোরম করা হয়েছে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক হয় অর্থাৎ নারী, সন্তান, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত অশ্বরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার।” [কুরআন ৩:১৪]

কুরআন অবতীর্ণ হওয়াকালীন সময়কার আরবরা এসব বিষয়েই আসক্ত ছিল। নারী ও পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ এখনও সেরকমই আছে। কমতি আসেনি নিজ সন্তানের প্রতি মানুষের মমতাপূর্ণ ভালোবাসাতেও। গ্রামীণ সমাজে চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি আজও সেই তখনকার মতোই আছে। তবে, বর্তমান যুগের বেশিরভাগ মানুষের কাছে রাশিকৃত সোনা-রূপার জায়গা করে নিয়েছে ব্যাংক ব্যালান্স এবং নানাবিধ বিনিয়োগ ও সঞ্চয়। আর সেই যুগের প্রেস্টিজ সিম্বল চিহ্নিত অশ্বরাজির জায়গা নিয়েছে নিত্যনতুন মডেলের গাড়ি ও বাহন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাধ্যম ও বস্তুর পরিবর্তন হলেও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি সেই একই রয়ে গিয়েছে। কম বা বেশি যাকে যতটুকু দুনিয়ার এসব নিয়ামত উপভোগ করতে দেওয়া হয়েছে তার জন্য তাকে আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

নিয়ামত বা অনুগ্রহের পাশাপাশি এগুলো আমাদের কারও কারও জন্য পরীক্ষাও বটে। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহ বলছেন: إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ “তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।” [কুরআন ৬৪:১৫]

হালাল উপায়ে এসব অর্জন ও ভোগ করলে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তা ব্যবহার করতে পারলে আল্লাহর দেওয়া এই পরীক্ষায় আমরা সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারব। আর তাতে ব্যর্থ হলে পার্থিব উপভোগের এসব উপকরণই পরকালীন জীবনে আমাদের জন্য আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে, সাধ্যে যতটুকু কুলায় অন্তত ততটুকু চেষ্টা আমাদের সবার থাকা উচিত যেন তা আখিরাতেও আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। এই বিষয়ে আমাদেরকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ বলেন: فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ “তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো।” [কুরআন ৬৪:১৬]

একইসাথে, ভালোবাসার মানুষেরা আমাদেরকে যেন পদস্খলনে প্ররোচিত না করে সেই ব্যাপারেও আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষত, জীবনসঙ্গী বা সন্তানের পরামর্শে বা ‘তাদের কথা চিন্তা করে’ আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কিছু করে বসা একেবারেই অনুচিত। আল্লাহ বলেন: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ “হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকো।” [কুরআন ৬৪:১৪]

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবনের মোহে পড়ে আখিরাতের স্থায়ী নিবাস বরবাদ করা মহা বোকামি। প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সে-ই যে স্থায়ী সেই নিবাসের জন্য কাজ করে। এর বিপরীত যারা করে তাদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে আল্লাহ বলেন: قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ “(হে নবী! মুসলিমদেরকে) বলো, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের সেই ব্যবসায় যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং বসবাসের সেই ঘর যা তোমরা ভালোবাসো – (তা) আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আল্লাহ অবাধ্যদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না।” [কুরআন ৯:২৪]  

দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই যেন আমরা অনুগ্রহপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি তা মাথায় রেখেই এই জীবনের প্রতিটি উপভোগ্য উপকরণের সঠিক ব্যবহার আমাদের করে যেতে হবে। আল্লাহ সহজ করে দিন।

1 comments

  1. […] সন্তান আমাদের জন্য ভোগ বিলাসিতা, অহংকার ও প্রতিযোগিতার বস্তুস্বরূপ নয়। তাহলে সন্তান কী? […]

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান