জাকির নায়েক যেভাবে জগত বিখ্যাত দাঈ হলেন

ডা: জাকির নায়েক কোনো ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেননি, তিনি কুরআনের হাফেজ নন, কুরআনিক আরবিও তাঁর ভালোমতো শেখা হয়নি – তারপরেও কিভাবে হলেন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত দাঈ? অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামী ব্যক্তিত্ব? মদীনাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানরা পর্যন্ত তাঁর লেকচার শুনতে তাঁর সেমিনারে এসেছেন। পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত খুব কম মুসলিম পাওয়া যাবে যে তাঁর লেকচার বা নাম শুনেনি। কিভাবে এই আপাত অসম্ভব বিষয়টা সম্ভব হলো? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দেয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁর “জাকির নায়েক: মাই লাইফ অ্যান্ড মাই স্টোরি” লেকচারে।

কুরআন মজিদের তিনটি আয়াতের কথা বলেছেন তিনি – যা তিনি সবসবময় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছেন, পালন করার চেষ্টা করেছেন। এগুলো অনুসরণ করলে সফলতা আসবেই। কারণ, এগুলো মানুষের প্রতিশ্রুতি নয়, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার প্রতিশ্রুতি।

১. আল্লাহর সাহায্যই সবচেয়ে বড় সাহায্য

সূরা আলে-ইমরানে আল্লাহ বলেছেন: إِن يَنصُرْكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا ٱلَّذِى يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعْدِهِۦ ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ “আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর তিনি তোমাদের সাহায্য না করলে তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? এবং বিশ্বাসীদের উচিত কেবল আল্লাহ্‌রই উপর নির্ভর করা।” [৩:১৬০]

আল্লাহর এই সাহায্য কিভাবে পাওয়া যাবে? কুরআন পড়তে হবে, অর্থসহ পড়তে হবে, বুঝতে হবে, এরপর একে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইবাদতে মনোযোগী হতে হবে। আর প্রাণ খুলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে – আল্লাহ না চাইলে কিছুই হবে না। আর আল্লাহ চাইলে সবচাইতে অসম্ভব ব্যাপারটাও সম্ভব হবে।

যে আহমেদ দীদাত মাত্র ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন, যে জাকির নায়েক তোতলামীর কারণে স্কুল-কলেজে কথা বলতে পারতেন না, কোনোদিন বড় কোনো ইসলামিক ডিগ্রি নেননি, তাদের কথা শুনতে কেন হাজারো, লক্ষ মানুষ আসত এবং আসে? একটাই কারণ – আল্লাহ চেয়েছেন, তাই।

আল্লাহ মানুষের অন্তরে আহমেদ দীদাতের লেকচারের প্রতি, জাকির নায়েকের লেকচারের প্রতি আকর্ষণ ঢেলে দিয়েছেন – তাই এত মানুষ তাদের কথা শুনেছে। কাজেই আপনার যা চাওয়ার তা আল্লাহর কাছে চান। তিনি চাইলে হবে, না চাইলে কিছু হবে না।

২. আল্লাহর পথে পরিশ্রম করতে হবে

সূরা আনকাবুতে আল্লাহ বলেছেন: وَٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ “যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথে থাকেন।” [২৯:৬৯]

উপরের আয়াত অনুসারে, আপনি যদি পরিশ্রম করার পরেও সফল না হন তার মানে আপনি যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন না, অথবা সঠিক পথে পরিশ্রম করছেন না। আল্লাহ চান আপনি আরো পরিশ্রম করুন, আপনার নিয়ত শুদ্ধ করুন, সঠিক উপায়ে পরিশ্রম করুন।

কিভাবে এই পরিশ্রম করব? কুরআনে যেভাবে বলা আছে, ওই পথে পরিশ্রম করতে হবে। কুরআনে মহান আল্লাহ বার বার রাত জেগে ইবাদত করার কথা বলেছেন। ডা: জাকির নায়েক ২৪ ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমান, রাত জেগে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন।

এর সাথে প্রচুর দান করতে হবে। নিজের জন্য ব্যয় সীমিত করতে হবে। ডা: জাকির নায়েক সারাজীবন তাঁর আয়ের (যা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিগত ব্যবসা যেমন – ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শেয়ার বাজার, হাউজিং ব্যবসা থেকে আয় করেন) কমপক্ষে ৫১% দান করেছেন (আসল সংখ্যা আরো বেশি, কিন্তু এক্সাক্ট সংখ্যা তিনি বলেননি)। যে ব্যক্তির ব্যবসায়ের বেশিরভাগ শেয়ারই আল্লাহর, তার আবার লস হওয়ার কিসের ভয়? কুরআনের দেখানো পথে চললে আপনি আখিরাত তো পাবেনই, এমনকি দুনিয়াতেও প্রচুর পাবেন।

৩. জ্ঞান অর্জন করতে হবে

সূরা নাহল এবং সূরা আম্বিয়াতে আল্লাহ বলেছেন: فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ “তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” [১৬:৪৩, ২১:৭]

জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। ডা: জাকির নায়েক সবসময় জ্ঞান অর্জনের জন্য ওই স্পেসিফিক ফিল্ডে যিনি বিখ্যাত তার থেকে ১:১ দেখা করে সরাসরি জ্ঞান নিয়েছেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য এদেশ থেকে ওদেশে ভ্রমন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেয়ে দাঈ হওয়ার বিভিন্ন টেকনিক শিখেছেন শেইখ আহমদে দীদাতের কাছ থেকে, পাকিস্তানে উপদেশ নিয়েছেন বিখ্যাত কুরআন তাফসীরবিদ ডা: ইসরার আহমেদ থেকে (ডা: ইসরার আহমেদ এর ভিডিও দেখে তিনি প্রথমে কুরআনের তাফসীর শিখেছিলেন), কুরআনিক আরবী শিখতে গিয়েছিলেন মদীনা এরাবিক বইয়ের রচয়িতা স্বয়ং শেইখ ভি আব্দুর রহিমের কাছে (এই কোর্সটা পারিবারিক কারণে তাঁর শেষ করা হয়নি), হাদিসের বেসিক শিখেছেন সরাসরি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস বিভাগের ডিন শেইখ জিয়াউর রহমান আজমি-র কাছ থেকে, শেইখ বিন-বাজের সাথে দেখা করে বিভিন্ন উপদেশ নিয়েছেন, ফিকহি জ্ঞান নিয়েছেন সৌদি ফতোয়া কমিটির অন্যতম সদস্য শেইখ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরীনের কাছ থেকে।

কিন্তু, মনে রাখতে হবে পৃথিবীর সব জ্ঞান থাকার পরেও মহান আল্লাহ যদি আপনাকে সাহায্য না করেন, আপনি কোনো সফলতা পাবেন না। শুধু জ্ঞানের কথা চিন্তা করলে ২৭ বছর বয়সী ডা: জাকির নায়েকের চেয়ে তাঁর ছেলে ২৭ বছর বয়সী ফারিক নায়েকের জ্ঞান বহু গুণে বেশি। সে কুরআনের হাফেজ, আরবী ভাষায় দক্ষ, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ইমাম সাউদ ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু, যদি আল্লাহর সাহায্য না থাকে তাহলে ২৭ বছর বয়সী জাকির নায়েক যা অর্জন করতে পেরেছিল ফারিক নায়েক তা অর্জন করতে পারবে না। জ্ঞান অর্জনের জন্য ডিগ্রি নিতে হবে, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে আখেরাতের জীবনে ডিগ্রী কোনো কাজে আসবে না। আমাদের লক্ষ্য ডিগ্রী বা খ্যাতি হলে চলবে না – লক্ষ্য হতে হবে আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি পাওয়া।

আমরা প্রায়শই ভুল করি যে, আমরা এই তৃতীয় পয়েন্টের উপর অর্থাৎ টেকনিকাল নলেজের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রথম পয়েন্টটি – আল্লাহর সাহায্য। নিজেকে উজাড় করে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, তাহাজ্জুদে উঠে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। আপনার যা ভালো লাগে প্রয়োজনে তা ছাড়তে হবে। কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে পরিশ্রম করতে হবে। এরপর যে বিষয়ে যে এক্সপার্ট তার থেকে ওই বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।

***

জাকির নায়েক: মাই লাইফ অ্যান্ড মাই স্টোরি” লেকচার থেকে। মূলত: ২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট – ২ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট, ৩ ঘণ্টা ৪ মিনিট – ৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট, এবং ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ও ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের কথাগুলোর সারমর্ম করা হয়েছে এখানে, আক্ষরিক অনুবাদ করা হয়নি।

সম্পূর্ণ লেকচারটি ইংরেজিতে দেখুন এখানে:

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান