স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে রূপান্তরকামী মতবাদের অনাকাঙ্খিত অনুপ্রবেশ

লিখেছেন: সামিউল মাশুক এন্টনি

এখানে দুটো ছবি আছে। একটায় “২০২৩” উল্লেখ করা, আরেকটায় “২০২৪” উল্লেখ করা। এই দুটো আগে পড়ে নিন। তাহলে বাকি নীচের লেখার মূল বক্তব্য বুঝতে সহজ হবে।

“শরীফার গল্প” শীর্ষক গল্প আকারে প্রবন্ধটা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩-এর ছবির অংশটা ‘২৩ সালের এবং ২০২৪-এর ছবির অংশটা ‘২৪ সালের পাঠ্যপুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে।

গল্পটা (বা প্রবন্ধটা) মূলত লেখা হয়েছে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী যেকোনো ছাত্রছাত্রী যারা সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া তাদের পাঠ্যপুস্তকের জন্য। তাদের বোঝার সক্ষমতা, বয়স ও মানসিক পরিপক্কতা মাথায় রেখে এবং ভবিষ্যতের ভাবনা ও সঠিক সিদ্ধান্তের জ্ঞান তৈরি করে দিতে। অবশ্যই এইটা বুড়ো হাবড়াদের বোঝার জন্য দেয়া হয়নি।

এবার আসি, এই লেখা কি আসলেও যাদের জন্য ছাপানো হয়েছে তাদের জন্য যথাযথ ভাব প্রকাশ করতে পারছে? নাকি, দ্বিধান্বিত করে ফেলছে?

১.

শুরুর কয়েকটা লাইনের বক্তব্য হলো – সবাই তাকে ছেলে বলতো। কিন্তু সে ছেলে মনে করতোনা নিজেকে। তার মনে হতো সে একজন মেয়ে৷ তার আচার-আচরণ, ভাবনা-পছন্দ মেয়েদের মতো৷

এখানে একটু থামুন।

বুঝতেই পারছেন, সে কিন্তু আসলে ছেলে। তার মনের ভাবনা মেয়েদের মতো৷ শারীরিক কোনো সমস্যা তার নেই৷ তাই খুবই স্বাভাবিক, সে মেয়েদের মতো ভাবনার হয়ে থাকলে তার ছেলে হিসেবেও ছেলেদেরই পছন্দ হবে।

প্রশ্ন হলো, কেন তাকে মনোচিকিৎসকদের শরণাপন্ন না করে “হিজড়া” বলা হচ্ছে? এটা একটা ভুল। হয়তো কাউন্সিলিং, থেরাপির মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক ভাবনার জায়গায় ফিরিয়ে আনা যেতো! পাঠ্যবইয়ে সেই পরামর্শ দেয়া হয়নি!

২.

গল্পের বা প্রবন্ধের মাঝামাঝি লেখা আছে, “একদিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো …”

এখানেও ভাবনার কথা! বিপদের কথা!

এই “এমন একজন” কোনো অবতার বা শিক্ষক নয়৷ এই “এমন একজন”-এর সাথে দেখা হওয়ার পরেই ৮০-৯০ দশকে ছেলেমেয়েরা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে মাদকাসক্ত হতো। এই “এমন একজন” আয়ের পথ করে দেয়ার নামে অনেক মানুষকে (পড়ুন মেয়েদের) পতিতাবৃত্তিতে নিয়ে গেছে!

পাঠ্যবইয়ের “এমন একজন” যদি তাকে মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যেত, তা বরং শিক্ষনীয় হতো৷ কিন্তু না! সে নিয়ে গেলো হিজড়াপল্লীতে!

এই “এমন একজন” থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়া উচিৎ অভিভাবকদের।

***

৩.

“তৃতীয় লিঙ্গ” এবং “হিজড়া” এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

“Third gender” is a term used to describe genders beyond the traditional binary of male and female. It acknowledges that some cultures recognize more than two genders. On the other hand, “transgender” refers to individuals whose gender identity differs from the sex assigned to them at birth. While some transgender people may identify with a third gender, the terms are distinct, as third gender encompasses a broader range of gender identities.

মোটা দাগে বুঝতে হবে, “তৃতীয় লিঙ্গ” বা নিজেকে বিপরীত লিঙ্গ ভাবাটা মানসিক এবং এতে শারীরিক কোনো ব্যতিক্রম বা পরিবর্তন থাকে না। অন্যদিকে, “হিজড়া” বিষয়টা জন্মগত। এটা মানসিক নয় শুধু, শারীরিকও।

৪.

কিছু প্রশ্ন করে যাই, পাঠক উত্তর দেবেন!

  • শারীরিকভাবে পুরুষ, কিন্তু মানসিকভাবে নারী; তিনি অপরাধ করলে যদি জেল হয়, তাকে কাদের সাথে রাখা হবে? পুরুষ জেলে, নাকি নারী জেলে?
  • কোনো পুরুষ যদি ধর্ষণ করে নিজেকে “মনে মনে নারী” প্রমান করেন, তাহলে তার বিচারকার্য কিভাবে হবে?
  • কোনো নারী যদি নিজেকে মনে মনে পুরুষ ভাবেন, তাহলে তাদের জন্য কি পুরুষদের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত চাকরিগুলো (দারোয়ান, গার্ড ইত্যাদি) বরাদ্দ করা হবে?

৫.

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে মোটামুটি ৫০০ শব্দের গল্প বা প্রবন্ধ দিয়ে সমকামী বা হিজড়াদের প্রতি “মানুষ” হিসেবে মমত্ববোধ তৈরির চেষ্টা করতেই পারে। কিন্তু শুরুতেই ভুল দিকনির্দেশনা দিয়ে ভাবনায় সংকীর্ণতা তৈরি করে কিভাবে সঠিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে?

এই লেখা পরিমার্জন করা উচিৎ, নয়তো বাদ দেয়া উচিৎ।

***

আরও পড়ুন:

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান