শবে বরাত ও আমাদের হালুয়া-রুটি বিলানোর সংস্কৃতি

লিখেছেন: ওমর ফারুক ফেরদৌস

এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রসূল সা. ও সাহাবীদের যুগে নিসফে শাবানের রাতটি আমাদের দেশের মতো সাড়ম্বরে পালিত হতো না। মসজিদে জমায়েত হয়ে ইবাদত করা, সারা রাত জেগে ইবাদত করা, মসজিদে মসজিদে আলোচনা, পরদিন এত ব্যাপকভাবে রোযা রাখা -কিছুই হতো না। কারণ এত সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকলে এই সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো নিয়ে এত সংশয় বা প্রশ্ন থাকতো না।

কিন্তু অনেকগুলো দুর্বল সনদে বর্ণিত হাদিস এবং একটি মোটামুটি শক্তিশালী সনদে বর্ণিত হাদীস থেকে এই বক্তব্য সাবেত বা প্রমাণিত যে, আল্লাহ এই দিন তাঁর সৃষ্টিকুলের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং ‘মুশরিক’ ও ‘মুশাহিন’ ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৯০, মুসনাদে আহমদ ৬৬৪২, সিলসিলাতুস-সহীহাহ ১৫৬৩)

মুশরিক কারা তা তো আমরা সহজেই বুঝি। মুশাহিন কারা? হাদীসের শারেহরা বলেছেন, মুশাহিন ওই ব্যক্তি যার অন্তরে অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা আছে, ভাই, স্বজন-বান্ধব, প্রতিবেশীদের সাথে যার বিরোধ বা মনোমালিন্য আছে। তো অন্তরের বিদ্বেষ, শত্রুতা দূর করার উপায় কী? বিরোধ, মনোমালিন্য মেটানোর উপায় কী? মানুষকে হাদিয়া দেওয়া, দাওয়াত করা, বাসায় খাবার পাঠানো, নিজের খাবার সবার সাথে ভাগ করে খাওয়া ইত্যাদি।

আমাদের হালুয়া-রুটি বিলানোর সংস্কৃতিতে মূলত এই কাজটাই করা হতো। অন্তর থেকে শত্রুতা, বিদ্বেষ, বিরোধ ঝেড়ে ফেলার চিন্তা থেকেই সম্ভবত কেউ এটা শুরু করেছিলো। পরে এটা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে শরয়ী আমলের রূপ পরিগ্রহ করে এবং সমস্যাজনক হয়ে ওঠে। শরয়ী আমল হিসেবে, আদর্শ বা সুন্নাহ হিসেবে আমরা এমন কিছুর অনুমোদন বা স্বীকৃতি দিতে পারি না যা রসূল সা. এবং তার সাহাবীরা করেননি। সুতরাং এই প্রথা ভাঙা বা এর বিরুদ্ধে সরব হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এক সময় দেখা দিয়েছিলো যখন এটাকে একটা আবশ্যক শরয়ী আমল হিসেবে পালন করা হতো, এমনকি কেউ না করলে তাকে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হতো।

কিন্তু এটাকে লোকজ সংস্কৃতি হিসেবে দেখলে আর সমস্যা থাকে না। আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশীদের বাসায় খাবার পাঠানো, হাদিয়া দেওয়া, দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো সর্বাবস্থায় উত্তম কাজ, ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ। জরুরী মনে না করে, শরয়ী আমল মনে না করে এই দিন এগুলো কেউ করলে তাতে সমস্যা নেই।

আসুন আমরা এই মহিমান্বিত রজনীতে সব রকম শিরক থেকে নিজেকে পবিত্র করি, অন্তর থেকে সব রকম বিদ্বেষ, শত্রুতা ঝেড়ে ফেলি, সবাইকে আপন করে নেই, হাদিয়া দেই, হাদিয়া নেই, খাবার পাঠাই, খাওয়াই, দাওয়াত করি, সবাইকে ক্ষমা করে দেই; আল্লাহও আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

***

আরও পড়ুন:

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান